মোঃসুজন মাহমুদ, প্রকাশক ও সম্পাদক, দৈনিক সফলতায় বাংলাদেশ
১৯ জুলাই ২০২৫, ১১:১৩ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫,বৈষম্য বিরোধীদের কাছেই যেন বৈষম্য।

শিক্ষা সবার অধিকার হলেও এ বৈষম্য নীতিতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সবার জন্য শিক্ষাঙ্গীকার। সরকারের এই সিদ্ধান্ত  পুনবিবেচনা বিবেচনা করা উচিত। কিন্ডারগার্ডেনে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে এই বৃত্তি পরীক্ষা বৈষম্যকে আবারো রূপ দেবে। এই বৃত্তি পরীক্ষার থেকে যদি কিন্ডারগার্টেনের ছাত্র-ছাত্রীরা বাদ পড়ে যায় তাহলে মেধা যাচাইয়ের মঞ্চ থেকে ছিটকে পড়বে হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন।সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্ডেন বা কেজি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণের সুযোগ বাতিল করে যেটি করেছে, সেটি কেবল একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি শিক্ষা নীতিগত বৈষম্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার শামিল।

গত ১৭ ই জুলাই ২০২৫ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর একটি পরিপত্র জারি করে যেখানে চলতি বছরের বৃত্তি পরীক্ষায় কেবলমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা, পিটিআই সংলগ্ন প্রাথমিক এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই অংশ নিতে পারবে।কোন এনজিও বা কিন্ডার গার্ডেন এর ছাত্র ছাত্রীরা এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। শহরকেন্দ্রিক অনেক ভালো শিক্ষার্থী যারা এই পরীক্ষার বাইরে  থাকবে কেবলমাত্র তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলাদা বলে অর্থাৎ সরকারি নয় বলে। ১৫ জুলাই এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় সে অনুযায়ী এই পরিপত্রটি জারি করা হয়। এই পরিপত্র দেখে দেশের লক্ষ লক্ষ  গার্ডেন এর শিক্ষার্থী অভিভাবক শিক্ষক এবং উদ্যোক্তারা প্রত্যেকের ভিতরে  ক্ষোভের সঞ্চারণ হয়েছে।

অভিন্ন প্রশ্ন থেকে যায় শিক্ষার মেধা যাচাইয়ের এমন একটি জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় কেন কিছু শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ করা হচ্ছে? কেন তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে ? কেবলমাত্র তারা কিন্ডারগার্টেন ও এনজিও স্কুলে পড়াশোনা করেই বলেই তাদের সাথে এই বৈষম্য?

আমাদের এই দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ কিন্ডারগার্ডেন গুলো অভিভাবকদের চাহিদা সরকারি ব্যবস্থাপনার ঘাটতি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনীহার কারণেই তারা এই কিন্ডারগার্ডেন স্কুলগুলোতে বাচ্চাদের ভর্তি করায়। শহরাঞ্চলে অনেক অভিভাবকের তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দিতে চায় না শিক্ষকের স্বল্পতা অবকাঠামত দুরবস্থা পাঠদানের মান নিয়েও সন্দেহ রয়েছে, আর এ সকল কারণে অনেক কিন্ডারগার্ডেন স্কুল স্বীকৃতির আওতায় না থাকলেও বাস্তবে তারা প্রাথমিক শিক্ষার অনেক বড় একটি অংশ যোগান দিচ্ছে। ২০২২ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা যায় দেশে প্রায় ৬০ হাজার এর বেশি কিন্ডারগার্ডেন ও এনজিও স্কুল রয়েছে, এসব স্কুলে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লক্ষ শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে সরকারি এই তথ্যের বাহিরে ও প্রায় এক কোটির উপরে শিক্ষার্থী রয়েছে এই কিন্ডারগার্ডেন স্কুলগুলোতে।  এমত অবস্থায় সরকার যদি এই শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে, সেই সকল শিক্ষার্থীদের এই সরকারি বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়, তবে সেটি এক ধরনের বৈষম্য ছাড়া আর কোন কিছুই নয়। যে সকল সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অর্থাৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে জড়িত যারা এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পক্ষে, তারা দেশের শিক্ষা কাঠামোর বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে মনে হয়। কিন্ডারগার্ডেনের এই বৃহৎ জনগোষ্ঠী উপেক্ষা করে যদি নীতি নির্ধারকরা এমন সিদ্ধান্তে অবিচল থাকেন তবে সেটা শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক ক্ষেত্রেও এর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দেখা যাবে বেসরকারি স্কুল কিন্ডার গার্ডেন স্কুল অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে তারা আন্দোলনে নামবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।

এখানে জানার বিষয় হচ্ছে কিন্ডারগার্ডেনের লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী সারা বছর কঠোর পড়াশোনা ও প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে ভিত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আশায় এগিয়ে এসেছে।  তখন হঠাৎ করে এই সকল শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা কতটুকু যুক্তিসংগত?

প্রশ্ন থেকে যায় যে কিন্ডারগার্ডেন গুলো সরকারের সব শর্ত পূরণ করে বৈধভাবে নিবন্ধন প্রাপ্ত হয়েছে সেগুলোকে কেন এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে?  সরকারি বৃত্তির অর্থ শিক্ষার্থীদের জন্য কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, দেখেন একজন শিক্ষার্থী শিক্ষার আলোয় নিজেকে প্রস্তুত করেছে সেখানে তার প্রতিষ্ঠানের আইনি মর্যাদা দিয়ে অধিকার বাতিল করে দেওয়াটা অমানবিক বলে আমার কাছে মনে হয়।

আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতি ও সংবিধানগত অঙ্গীকার একটি সবার জন্য শিক্ষা।  তাহলে কেন এই অধিকার থেকে  ছাত্রছাত্রীরা বঞ্চিত হবে। শিক্ষা শিশুদের মৌলিক অধিকার সে অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোন এখতিয়ার নেই রাষ্ট্রের। সবচেয়ে বড় কঠিন সত্য হচ্ছে সারাদেশে প্রাথমিক অর্থাৎ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের থেকে কিন্ডারগার্ডেন ও এনজিও স্কুলে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা বেশি।  এই প্রতিষ্ঠানগুলো না থাকলে কোটি ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাজীবন শুরু থেকেই কঠিন হয়ে পড়ত। কিন্ডারগার্ডেন শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয় বরং এটি একটি সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অবকাঠামো বটে। সরকার অনেক সময় বলে ইন্টার গার্ডেন বন্ধ করার পক্ষে নয়, কিন্তু এই বৃত্তি পরীক্ষার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করতে যাচ্ছে সরকার। এটি সরকার ও সাধারণ মানুষের ভিতরে একটি পারস্পরিক বিশ্বাসের সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

যে সকল কিন্ডারগার্ডেন ইতিমধ্যে নিবন্ধন প্রাপ্ত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও কোনো ব্যতিক্রম রাখার বিষয়টি আরো বিতর্কিত হয়।

এখানে একটি কথা না বললে নয়, যেখানে নন এমপিও ভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা এস এস সি পরীক্ষা দিতে পারে, সেখানে নিবন্ধন প্রাপ্ত কিন্ডার গার্ডেন স্কুলগুলো কেন সরকারি প্রাথমিক ভিত্তিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না?

ভাবতেই অবাক লাগে অথচ বর্তমান সরকারি বৈষম্য বিরোধী সরকার। আমাদের সংবিধানে বলা আছে পরিষ্কারভাবে শিক্ষা হবে সবার জন্য, সমান, ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। একটু চিন্তা করে দেখবেন নীতি নির্ধারকেরা এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত সেই চেতনাকে ধূলিসাৎ করছে না তো?

সকল শিশুই সমান সম্ভাবনার অধিকারী রাষ্ট্রের কাজ সেই সম্ভাবনার সিঁড়ি তৈরি করে দেওয়া, সেটা ভেঙে দেওয়া নয়। সরকারের উচিত চলতি বছরেই এই বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্ডেন ও এনজিওর শিক্ষার্থীরা যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে সেই সুযোগ করে দেওয়া। প্রাথমিক শিক্ষা হলো জীবনের একটি ভিত্তি সেই ভিত্তি যদি বৈষম্য দিয়ে গঠন করা হয় তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কোন ইতিবাচক জীবন গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।

  • মোঃসুজন মাহমুদ
  • প্রকাশক ও সম্পাদক
  • দৈনিক সফলতায় বাংলাদেশ

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫,বৈষম্য বিরোধীদের কাছেই যেন বৈষম্য।

আজ সেই ১৯ জুলাই ২০২৪। পুলিশের গুলিতে রংপুরের ৫ জন শহীদ

funny video

সোহাগ হত্যাকাণ্ড: তদন্তে ধীরগতি, রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ

পারমাণবিক আলোচনায় ফিরতে প্রস্তুত, যদি হামলা না হয়

বগুড়ায় কিশোরী মেয়ের বিয়ে না দেওয়ায় বাবাকে পিটিয়ে হত্যা, তিনজন গ্রেপ্তার

চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩০, হাসপাতালে ৬৫৯ জন

এনটিআরসিএ সনদধারীদের সচিবালয়মুখী মিছিলে সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিপেটা

কুয়াকাটায় এক কোরাল বিক্রি ২৪ হাজার ১শ’ ৫০ টাকায়

ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ফোনালাপ, ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা

১০

‘হতাশ আমার হওয়া উচিত, নাকি তার’: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পাওয়া প্রসঙ্গে বিবিসিকে মুহাম্মদ ইউনূস

১১

পাল্টাপাল্টি হামলা ও হুমকি অব্যাহত, উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের আহ্বান

১২

ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পাল্টা পাল্টি অভিযানে উত্তপ্ত তেহরান ও তেলআবিব

১৩

ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী ৩৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে নেপাল থেকে

১৪